Thursday, October 30, 2014

হায়দারের দেশ, আমার দেশ





হিন্দুশাস্ত্র বলেছে পুং নামক নরক থেকে উদ্ধার করে যে, সে-ই হল পুত্র। কিন্তু ভূস্বর্গপ্রতিম নরক থেকে উদ্ধার করা কোন্ পুত্রের পক্ষে সম্ভব? তাছাড়া হিন্দুশাস্ত্রের বিধান বিধর্মীদের বেলায় খাটে কিনা সেটাও গুরুতর প্রশ্ন। খাটলেও সবার উপরে AFSPA (Armed Forces’ Special Powers Act) সত্য তাহার উপরে নাই। অতএব যখনই হায়দারের বাবা নিরুদ্দেশ হয়েছেন তখনই তো বোঝা গেছে তাঁর আদরের পুত্রটি যতবড় তালেবরই হোক না কেন, সে এসে বাবাকে উদ্ধার করতে পারবে না, তাঁর পরিণতি যা হবার তা-ই হবে। প্রত্যাশা বাবারও ছিল না। তাই তো এলাকার সুপরিচিত শ্রদ্ধেয় ডাক্তারবাবু সন্দেহভাজন নাগরিকের আলখাল্লায় পরিচয়পত্র হাতে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যাওয়ার আগে বলে যান হায়দারের জন্য ঈশ্বর আছেন, তিনিই থাকবেন। অর্থাৎ বোঝা গেল ‘রোজা’ সুলভ নিরুদ্দেশ লোকটিকে খুঁজে বেড়ানোর রোমাঞ্চ আমাদের জন্য অপেক্ষা করে নেই।
কি করে বুঝলাম নেই? কি যে বলেন! এটা ২০১৪। খোঁজখবর না নিয়ে, দু-একজন ফিল্মপন্ডিতের লেখাপত্র না পড়ে কি আর পয়সা খরচা করে দেখতে গেছি ছবিটা?
না। হলে যে জনাকুড়ি দর্শক ছিল তারা সবাই মোটেও অতসব জেনে যায়নি। তার প্রমাণ ডঃ মীর যখন মিলিটারির মুখঢাকা খোঁচড়টির সামনে দাঁড়িয়ে, তখন সোচ্চার প্রার্থনা “চিনিস না, চিনিস না”। তবুও সকলেই বুঝলেন যে ডঃ মীর আর ফিরবেন না। কারণ অবচেতনে আমরা সকলেই জানি, উগ্রপন্থীরা ধরে নিয়ে গেলে তবু ফিরে পাওয়ার আশা আছে, পুলিশ বা মিলিটারির বিষনজরে পড়লে কেউ ফেরে না। ডঃ মীর আমাদের অচেনা হতে পারেন, ভিখারী পাসোয়ান তো অচেনা নয়।
দেশপ্রেম ব্যাপারটা ভারী গোলমেলে। আমি পশ্চিমবঙ্গবাসী, স্বাধীন দেশের নাগরিক হিসাবে বেশ একটু আত্মশ্লাঘা আছে, কাশ্মিরীদের মত ভারত আমার উপরে শোষণ চালাচ্ছে এরকমও মনে হয়না চট করে। অথচ যে লোকটাকে স্পষ্ট দেখলাম ভারতবিরোধী যোদ্ধার প্রাণ বাঁচাচ্ছে তার বাড়িটা উড়ে গেল দেখে আমার বেশ রাগ হল। এমনকি লোকটাকেও মানবতাবাদী বলেই মনে হচ্ছিল। কি আপদ বলুন দেখি!
লেনিন নাকি অনেক ঝানু কমরেডের মতামত অগ্রাহ্য করে আইজেনস্টাইনের ছবির জন্য টাকা বরাদ্দ করেছিলেন। যুক্তিটা ছিল এই যে ফিল্ম যা পারে তা হাজারটা বক্তৃতাও পারে না। ‘হায়দার’ দেখার পরে এটা অকাট্য যুক্তি বলেই মনে হয়। অরুন্ধতী রায় কাশ্মিরীদের উপর অন্যায় নিয়ে যতবার লেখেন ততবার দেশদ্রোহী আখ্যা পান, মহিলা বলে ধর্ষণের হুমকিও শোনেন। অথচ ঐ যে দু ঘন্টা চল্লিশ মিনিট হিন্দুরাষ্ট্র হতে চাওয়া দেশের মূল ভূখন্ডের আমরা কয়েকজন প্রথমে হিলাল মীরের জীবনভিক্ষা করলাম নিজ নিজ ঈশ্বরের কাছে, তারপর চাইলাম হায়দার তার ভারতবন্ধু কাকাকে খুন করুক, প্রতিশোধ নিক বাবার হয়ে, এ কি ফিল্ম ছাড়া কোনকিছুর দ্বারা সম্ভব হত? আবার হল থেকে বেরিয়ে দিব্য বাড়ি চলে এলাম, একবারও নিজেকে দেশদ্রোহী মনে হলনা কিন্তু। অন্য কেউও তেমন অভিযোগ করে গ্রেপ্তার টেপ্তার করেনি এপর্যন্ত।
যখন হায়দার আমাদের সবাইকে চমকে দিয়ে তার সবচেয়ে ঘেন্নার মানুষটাকে জীবনযন্ত্রণা ভোগ করার জন্য ছেড়ে দিল তখন তো একটা বিরাট চড় এসে পড়ল আমার গালেও কারণ আমিও তো বিড়বিড় করছিলাম “চালা, গুলিটা চালা”। অ্যারিস্টটল তো বলেছিলেন ট্র্যাজিক নায়কের কষ্টভোগের মধ্যে দিয়ে আমারও কষ্টভোগ এবং ফলতঃ পাপস্খালন। ‘Hamlet’ দেখে তাই-ই তো হয়। কিন্তু বিশাল ভরদ্বাজ কি ঠিক তা ঘটালেন? ট্র্যাজিক নায়ক যখন তার ট্র্যাজেডির ঊর্দ্ধে উঠে নতুন পথের সন্ধান দিয়ে যায়, কী বলে তাকে? Catharsis শব্দটা কি ধরতে পারে সেইসময়ে দর্শকের অপরাধবোধকে?
বয়ঃসন্ধিকালে দেখেছিলাম সেই ছবিটা --- সেখানেও একটা খোঁজ ছিল; সদ্য বিবাহিতা স্ত্রী খুঁজে বেড়াচ্ছে অপহৃত স্বামীকে সেই কাশ্মীরেই। কি খারাপ সেখানে কাশ্মীরের লোকগুলো। গোটা রাজ্যটায় ভালো মানুষ বলতে শুধু এক মন্দিরের পুরুত আর একটা অবলা মেয়ে। বাকি সবাই AK ৪৭ চালায় আর জাতীয় পতাকা পোড়ায়, এবং নামাজ পড়ে। কি মজা! কত সোজা ছবি। কিচ্ছু ভাবতে টাবতে হয় না। বেশিরভাগ লোক যেমনভাবে কাশ্মীরকে ভাবে ঠিক তেমনই দেখানো। ছবিটা মুক্তি পেয়েছিল ১৯৯৫ তে। ‘হায়দার’ আমাদের ঐ সময়েরই গল্প বলছে। মানে কাশ্মীরকে কাশ্মীরের চোখ দিয়ে দেখতে আমাদের সময় লাগল দু দশক। এ বড় ভয়ঙ্কর ট্র্যাজেডি; এর কাছে ‘Hamlet’ শিশু। অথচ আমাদের দাবী হল কাশ্মীরিরা যেন এদেশটাকে নিজের ভাবে, গলা ছেড়ে “জয় হিন্দ” বলে। Chutzpah বটে।
হায়দার আলিগড় বিশ্ববিদ্যালয়ে সাহিত্যের ছাত্র ছিল। কবিতাও লিখত। তার হাতে কি কোনভাবে এসে পড়েছিল নবারুণ ভট্টাচার্যের ‘এই মৃত্যু উপত্যকা আমার দেশ না’? সে জন্যই কি সে জন্মভূমিকে প্রচলিত নামে সম্বোধন না করে পছন্দের নামে ইসলামাবাদ বলে ডাকে? আমাদের সকলেরই তো বড় আদরের বড় ব্যক্তিগত বাবা-মায়ের বিছানাটা, বাবার চেয়ারটা, বাবার প্রিয় গানটা, বাড়িটা, পাড়াটা। সেইজন্যেই দেশটা। যার সেগুলো হারিয়ে যায় সে তো ঈশ্বর আর সীতার মত দেশ খুঁজে বেড়ায় আজীবন।
যত সজোরে দেশপ্রেম ঘোষণা করছি আমরা আর অন্যের দেশপ্রেম দাবী করছি তত কি দেশটা হারিয়ে যাচ্ছে আমাদের? হায়দার কিন্তু শেষ পর্যন্ত ক্ষমা করতে চেষ্টা করেছে। মহাত্মা গান্ধী নামে এক দেশদ্রোহী ট্র্যাজেডি কাটিয়ে ওঠার ওরকমই একটা পথ বাতলেছিলেন বটে দাঙ্গায় সন্তান হারানো এক হিন্দু বাবাকে --- “প্রতিশোধ ভুলে যাও, একটা অনাথ মুসলিম বাচ্চাকে দত্তক নাও।” সেই যে রিচার্ড অ্যাটেনবরোর ছবিটায়।
ওহো! সে তো আবার একটা ইংরেজ। ওর দেশের বিরুদ্ধেই তো আবার আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রাম। বোঝো কান্ড! এ তো দেখছি দেশ ব্যাপারটাই বেশ গোলমেলে!

*এটা ফিল্ম রিভিউ নয়। ওটা লেখার বিদ্যে আমার নেই, এক্ষেত্রে উদ্দেশ্যও ছিল না।

Sunday, November 3, 2013



দেবতার জন্ম


 বের্টোল্ট ব্রেখটএর 'গ্যালিলিও' নাটকে এক সংকটমুহূর্তে তাঁর শিষ্য বলেন "হে ঈশ্বর, দেশ বড় দুর্ভাগা I এখানে একজনও নায়ক নেই I " প্রাজ্ঞ এবং নির্যাতিত মানুষটা উত্তরে বলেন  "দুর্ভাগা সেই দেশ যে দেশের একজন  নায়কের প্রয়োজন হয় I" 
কলকাতায় এই নাটক মঞ্চস্থ হওয়ার সময় আমার জন্ম হয়নি I কিন্তু বাবা-মা এবং পরবর্তীকালে শিক্ষকদের মুখে শোনা সংলাপ বারবার মনে পড়ে যখনই বোঝবার চেষ্টা করি কেন শচীন তেন্ডুলকার শুধুমাত্র একজন অসাধারণ ক্রিকেটার না হয়ে দেবতা হয়ে উঠলেন আপামর ভারতবাসীর কাছে
এই ব্লগারের, পাঠকের আর শচীনের যে দেশে জন্ম তা যে দুর্ভাগা নিয়ে আশা করি বিশেষ বিতর্কের প্রয়োজন নেই I  
১৯৮৯ যখন শচীনের আন্তর্জাতিক অভিষেক হয় তখন স্বাধীনতার পর ৪২ বছর অতিক্রান্ত অথচ দেশের একটা বড় অংশের মানুষ পরিষ্কার পানীয় জল পান না, পেট ভরে খেতে পান না তো অনেকেইউপরন্তু রাজীব গান্ধীর সরকার অযোধ্যায় বাবরি মসজিদের তালা খুলিয়ে দিয়েছেন ; দেশ আরো একবার সাম্প্রদায়িক বিভাজনের দিকে এগোচ্ছে, প্রধানমন্ত্রী নিজে দুর্নীতিগ্রস্ত বলে অভিযোগ উঠেছে I এমন একটা সময়ে এই দুর্ভাগা দেশের তো একজন নায়ককে দরকার ছিলই
শচীনের টেস্ট অভিষেক ১৫ নভেম্বর ১৯৮৯, আর সে বছর সাধারণ নির্বাচন শুরু হয় ঠিক এক সপ্তাহ পরে --- ২২ নভেম্বর I নির্বাচনের ফলাফলে দেখা যায় লোকসভা ত্রিশঙ্কু I সেই থেকে ১৯৯১ এর আগে পাঁচ বছরের স্থিতিশীল সরকার হয়নি I এই সময়ে ভারতীয় ক্রিকেট দলও প্রায় কিছুই জেতেনি, নেতাদের মধ্যে জনগনমনয়ধিনায়ক স্পষ্টতঃই ছিলেন না I অথচ দেখা গেল ভাল করে দাড়ি গোঁফ না গজানো একটা ছেলে পাকিস্তানের জোরে বোলারের নাক ফেটে গেলেও পরের বলে চার মেরে দিল (শিয়ালকোট, ১৯৮৯), নিউজিল্যান্ডে দাঁড়িয়ে রিচার্ড হেডলির দলের সাথেও প্রায় শতরান করে ফেলছিল (নেপিয়ার, ১৯৯০),  ইংল্যান্ডের মাঠে ইনিংস হার বাঁচাল (ওল্ড ট্র্যাফোর্ড, ১৯৯০) I বয়সে যে নিতান্তই বালক তার এইসব কান্ডের পরে দুর্ভাগা দেশের নায়ক হয়ে যাওয়া বোধহয় নেহাত অপ্রত্যাশিত নয় I 
দুধের শিশুর প্রতিভায় আলোকিত হওয়ার ব্যাপারটা এদেশে সুপ্রাচীন I কৃষ্ণের কংসবধের গল্প দিয়ে শুরু I "ধর্ম সমাজের আফিম" --- কার্ল মার্কস বলেছিলেন I আর ক্রিকেটকে তো ভারতবর্ষে ধর্মের জায়গাই দেওয়া হয়েছে আজকাল I জনমানসে প্রক্রিয়াটা শুরু হয়েছিল সেইসময়ই যেহেতু প্রচলিত ধর্মগুলো সব ধরণের মানুষকে বাস্তবের বেদনা থেকে উদ্ধারের পথ দেখাতেও পারছিল না আবার বাস্তব ভুলে থাকতে পারার মত নেশাও ধরাতে পারছিল না I ফলত এই ধর্মের ঈশ্বর বনে যাওয়া শচীনের পক্ষে প্রায় অনিবার্য ছিল I হয়ত এটা এড়ানো যেত, যদি কপিল দেব তখনও মধ্যগগনে থাকতেন বা ১৭-১৮ বছরের রাহুল দ্রাবিড় স্বভাবসিদ্ধ নিপুণতায় মার্ভ হিউজ, ম্যাকডারমটকে পার্থে নির্বিষ করে দিতে পারতেন I সেক্ষেত্রে একক রক্ষাকর্তা হিসাবে শচীনের চেহারাটা আবালবৃদ্ধবনিতার মনে এভাবে গেঁথে যেত না I ব্যাটসম্যান শচীনের তাতে ভালই হত I কিন্তু যে দেশ যে সমাজ থেকে তিনি উঠে এসেছেন তার প্রভাব এড়াবেন কি করে ? তিনি তো আর সত্যিই ভগবান নন I
কিন্তু এই আরোপিত দেবত্ব থেকে তো শচীনের  মুক্তি হতেই পারত, এমন তো নয় তিনি কখনও ব্যর্থ হননি, কিন্তু হল না I মুশকিল হল যখন তিনি ব্যর্থ হয়েছেন তখন অন্যরা আরো বেশি ব্যর্থ, আর যখন তিনি সফল তখনও অন্যদের সাথে তাঁর পার্থক্য স্পষ্ট I এবং ইতিহাস, যে কিছুতেই শচীনের পিছু ছাড়েনি I ১৯৯১ তে দেশে নরসিমা রাও সরকার I একদিকে দেশে উদারীকরণের ঢেউ উঠছে, অন্যদিকে রাম জন্মভূমি-বাবরি মসজিদ নিয়ে দেশ আরো বিভক্ত হচ্ছে I শচীনের রথ যে গতিতে ক্রিকেটবিশ্ব পরিক্রমা করেছে ঐসময়, প্রায় তেমনভাবেই এগিয়েছে লালকৃষ্ণ আদবানির রথও I সেই দ্বিধাবিভক্ত দেশে, প্রতিদিন বদলে যাওয়া দেশে, পাশের মানুষের প্রতি বিশ্বাস হারানোর দিনে মাঠের মধ্যে সবচেয়ে ধারাবাহিক যে মানুষটা, তাঁকেই সকলের "আমার লোক" মনে করায় কল্পনাবিলাস আছে, অসহায়তা আছে কিন্তু অন্যায় নেই I আসলে শচীন যতটা জনতার নায়ক তার চেয়েও বেশি প্রত্যেক ভারতীয়ের ব্যক্তিগত সঙ্গী I
১৯৯২ এর জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারিতে অস্ট্রেলিয়াতে গোহারা সিরিজে শচীন স্মরণীয় শতরান করলেন সিডনি আর পার্থে I সেবছরই ৬ ডিসেম্বর গজনীর মামুদের মত উল্লাসে আদবানি, উমা ভারতীরা নাচলেন বাবরি মসজিদ গুঁড়িয়ে দিয়ে I আজহারের ভারত তখন দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে ব্যস্ত এবং যথারীতি দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে I টেস্ট সিরিজ ০-১ হারলেও একদিনের সিরিজে ভারতকে দুরমুশ করে ৫-২ জেতে কেপলার ওয়েসেলসের দল I টেস্টে একটা শতরান করলেও এই সফরে শচীন মোটের ওপর ব্যর্থ, দলও তাই I
মনে করুন সেই ডিসেম্বর-জানুয়ারির কথা --- দেশব্যাপী দাঙ্গা, গুজব, মুম্বাইতে বিস্ফোরণ I তখন একজন ভারতীয় কিসের আশায় ক্রিকেট দেখতেন টিভিতে ? একটু আনন্দ, একটা কল্পনিরাপত্তা --- "নিজের বলতে এইটুকুই তো I" আর সেই দলগত ব্যর্থতার মধ্যেও জোহানেসবার্গে শতরান করলেন সেই শচীন I
বাস্তব থেকে পালিয়েই তো ধর্মের কাছে যাই আমরা, সাময়িক আরাম পেতে I যখন এমনিতে ঘুম আসে না তখনই তো আফিমের দরকার হয় I আর ওটুকুর জন্য তো কয়েকটা ড্রাইভ আর পুলই যথেষ্ট I কারণ আমরা কেউ তখন জিতছি না, ভ্রাতৃঘাতী দাঙ্গায় মানুষ মেরে কেউ নিজের দলকে জেতাতে পারছি না I সুতরাং শচীন যখন দারুণ একটা ইনিংসের পরেও জেতাতে পারছেন না দলকে, তখন তাঁকে মনে হচ্ছে আমাদেরই একজন I এভাবেই শচীনের দেবত্ব বেড়েই চলল I তিনি কখনই ভারতবাসীর স্বর্গবাসী দেবতা নন, তিনি প্রিয়জন, সখা I যীশুর মত, মহম্মদের মত, গোকুলবাসী কৃষ্ণের মত I শচীনের মত দেবতার সুবিধা হল আমাদের ক্রমশ পরধর্মবিদ্বেষী হয়ে ওঠা দেশে তিনি সব ধর্মের মানুষের দেবতা হয়ে উঠতে পারেন I দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্যি যে সেই ১৯৯০ এর দিনগুলো থেকেই আমাদের সবাইকে একসূত্রে গাঁথতে পারে এমন জিনিসের কথা ভাবতে গেলে ক্রিকেট ছাড়া আর কিছু মনে আসেনা I
ভাবছেন তো এই ব্যাখ্যায় পরবর্তীকালেও শচীনের উত্তুঙ্গ জনপ্রিয়তার ব্যাখ্যা হয় না, কারণ সেইসব সংকটের দিন কেটে গেছে ? অনেকে তাই বলেন বটে I উদার অর্থনীতির ভারতে নাকি যুবসমাজ অনেক বেশি আত্মবিশ্বাসী কারণ এখন নাকি আমরা "21st century superpower", এখন নাকি দেশের অনেক উন্নতি হয়েছে, দেশের মানুষ এখন আগের চেয়ে অনেক ভালো আছেন I
ভারী ভালো লাগে এসব ভাবতে I কিন্তু অভিজ্ঞতা যে অন্য কথা বলে I চোখের সামনে তো দেখি উচ্চশিক্ষিত ছেলেমেয়েদের অতিসামান্য বেতনে বহুজাতিকের চাকরি করতে I এদিকে মোবাইল ফোনে কথা বলার চেয়ে ১ কিলো পেঁয়াজ কেনার খরচা এখন বেশি I এখনও কত মানুষ পানীয় জল আনতে মাইলের পর মাইল হেঁটে যান তা কি আমরা জানি না ? অনাহারের লজ্জাজনক প্রমাণ ঢাকতে কিভাবে পরিসংখ্যান বিকৃত করা হয় তা কি কারো জানতে বাকি আছে ? মোদ্দা কথা শচীন যখন শুরু করেন তার থেকে এখনকার ভারতবর্ষের যা পার্থক্য তা বহিরঙ্গে I তাঁর ভক্তরা শুধু মলে যাওয়া আর মাল্টিপ্লেক্সে সিনেমা দেখা লোক নন I "বাজারের পোকা কাটা জিনিসের কেনাকাটা করে" এমন লোকেরাও শচীনভক্ত, এবং গত আড়াই দশক শচীনের মাঠের লড়াই আসলে তাঁদের একান্ত ব্যক্তিগত জীবনের লড়াই I এইজন্যই নিখুঁত দ্রাবিড় কখনও শচীনের জায়গা নিতে পারলেন না ; তাঁর সাফল্যে সেই অবিশ্বাস্যতা নেই, যখন তিনি শুরু করেছেন তখন একক যুদ্ধগুলো শচীন লড়ে ফেলেছেন I লড়াকু কুম্বলেও পারলেন না, কারণ তিনি বল হাতে ভুল করলে ফিরে আসার সুযোগ পান, শচীনের মত একটা ভুলে সব শেষ --- এই দমবন্ধ করা উত্তেজনা তিনি আমাদের দিতে পারেননি I অথচ আমাদের জীবনেও তো আমরা দ্বিতীয় সুযোগ পাইনা সচরাচর I
এমন কি ছোট শহর থেকে উঠে আসা ধোনিও শচীনকে শুরু থেকে দেখা প্রজন্মের কাছে তাঁর জায়গা নিতে পারলেন না I কারণ কোটিপতি শচীন শেষপর্যন্ত হাবেভাবে মধ্যবিত্তই থেকে গেলেন I যেদিন ব্যাটে-বলে হচ্ছে না সেদিন মাথা নিচু করে প্রিয় শট ছেঁটে ফেলে খেলব ; নিজে খাই আর না খাই, মদ, সিগারেটের বিজ্ঞাপন করব না, আমার জীবনে আমার স্ত্রীই একমাত্র নারী (অন্তত লোকে তাই জানুক) --- এইসব মধ্যবিত্ত মূল্যবোধ তিনি ছাড়লেন না I ফলে মহাতারকা হয়েও পাশের বাড়ির ছেলে হয়েই শচীন রইলেন I আমরা তো বরাবরই "দেবতারে প্রিয় করি / প্রিয়েরে দেবতা" I
শচীন যে সময়ে বিদায় নিচ্ছেন সেই সময়ে আমাদের ওরকম একজন দেবতার বড় দরকার I এমন একজন দেবতা (বা ব্রেখট যাকে নায়ক বলেছেন) যাঁকে দেখে আমাদের অন্তত কিছুটা সময় মনে হয় আমরা এক, দেশটা আমাদের সবার I কারণ সামনে এমন একটা নির্বাচন যেখানে আসলে এক নম্বর ইস্যু হল "ভারত কি হিন্দুদের দেশ যেখানে মুসলিম এবং অন্য সংখ্যালঘুদের দ্বিতীয় শ্রেণীর নাগরিক হয়ে থাকতে হবে নাকি ভারত সমানভাবে সকলের দেশ ?"
শচীন এমন একজন যাঁর হেলমেটে লাগানো থাকে তেরঙ্গা I এইজন্য এবং শিবসেনা প্রধান বাল ঠাকরের সাথে তাঁর ঘনিষ্ঠতার জন্য একসময় মনে করতাম শচীন উগ্র জাতীয়তাবাদী I বোধয় ঠাকরেরাও তাই-ই ভাবতেন I কিন্তু কয়েকবছর আগে যখন আমাদের "অরাজনৈতিক" তেন্ডুলকারমশাই বলে বসলেন "আমি আগে ভারতীয় তারপর মারাঠি" I তখন ভুল ভাঙল I রাজ ঠাকরে বোধয় এখনও রেগে আছেন I তিনি ব্যাট করতে যাওয়া মানেই হিন্দু বা মুসলিম নয়, মারাঠি বা পাঞ্জাবি নয়, একজন সাধারণ ভারতীয়ের ব্যাট করতে যাওয়া --- এরকম একজনকে আমাদের দরকার ছিল ভীষণ I
 বড় দুর্ভাগা সেই দেশ যে দেশের একজন নায়কের প্রয়োজন হয় এবং সেই নায়ককে খুঁজতে হয় ক্রিকেট মাঠে I 

Friday, June 28, 2013

A cynical look at MS office


Now that the hurly burly’s done and the never-tiring Indian cricketers are on their way to the picturesque Caribbean islands to play the umpteenth tri-series against the same old faces whom they bullied over the last fortnight, may I stand a few steps away from the crowd --- not because my wife has asked me not to be in a crowd but because I cannot put my heart into it --- and say a few things which could make me unpopular?

No, I do not deserve a pat on the back for daring to be different as I am doing this just because I am too afraid, of what the future holds for me as an Indian cricket fan, to give in to this euphoria of winning the Champions Trophy against all odds and having the best-ever Indian captain; the only captain in history who has laid his hands on every title that is on offer.

I’ll come to that ‘best-ever Indian captain’ feather later. Let me discuss the last part of the previous sentence first.

The International Cricket Council started the ICC Test Championship (which is basically a points-based ranking system) in June 2003 and Australia were at the top of the heap then. They remained at the top of the Test rankings till August 2009. Ricky Ponting, their ODI skipper, took over the Test captaincy in 2004 when Steve Waugh retired. He had already won the 2003 World Cup as captain, and was in charge of the ODI side when they annexed the Champions Trophy in 2006. That meant having all three top feathers in his cap. One may argue that he inherited the No. 1 status, didn’t win it, but the argument is weak because the Test Championship system is such you have to keep scoring points to hold on to your place or lose the trophy called Mace. Australia successfully did that under him till 2009. Therefore Ricky Thomas Ponting laid his hands on every trophy on offer much before Dhoni did.

So only a strangely selective documentation would make Dhoni the first captain to have won everything that is there to be won.

True World Twenty20 came up later and Ponting never won it. But if ICC starts a new tournament tomorrow and Dhoni does not win it as captain before retirement, will that erase the record we are boasting of today?

It would be fair to ask what the need for this hair-splitting judgment is. Does being second, instead of first, to have achieved that feat make Dhoni’s achievement any less significant? It doesn’t. Winning any multi-nation tournament is heroic. Doing it over and over is even more heroic. But if you praise somebody more than what is due, it won’t be long before you curse the same person unreasonably.

This brings me to the question why I still can’t spontaneously call him the best ever Indian captain despite winning more trophies than any of his predecessors.

Sourav Ganguly, the man Dhoni is often compared to, softly said a significant thing in the TV studio hours before the Champions Trophy final on June 23. Asked what a great achievement it would be if India were to win, making Dhoni the first captain to win everything on offer, Ganguly said: “That would definitely be great. These days you have an ICC tournament every two years…”

Exactly my point.

While praising him for how much we have won under him, let’s not forget how much we have lost. After winning the inaugural World T20 in 2007, we haven’t been able to clear the first hurdle in three consecutive editions. We were also knocked out of the 2009 Champions Trophy from the group stage, not to mention one of the worst strings of defeats in our Test history, in 2011-12.

We, the people, have been suffering from collective amnesia for a long time. Incessant cricket makes matters worse. When we lose we become so emotional that we bring Sachin Tendulkar down to the level of Gagan Khoda, and when we win we elevate Shikhar Dhawan to the level of Brian Lara.

If you are not already up in arms against the cynic that is me, or don’t feel I am a half-educated fan lecturing you on something as scholarly as cricket, let me remind you Dhoni has won only one Test series abroad (in New Zealand, 2009). A number of his predecessors, from Ajit Wadekar to Sourav Ganguly, have better overseas captaincy records than him. With due respect to all forms of cricket and the rankings, winning away Test series is still the biggest proof of quality. Till MSD does that more than once, let him remain one of our best. Let there be something, for Indian cricket’s sake, which our captain hasn’t achieved.

Now allow me to say what I make of the Champions Trophy win.

It’s good that we could win a multi-nation tournament abroad with a bunch of young players but the ease with which our team accomplished the job should not be taken too seriously if we are to have long-lasting success.

England had hosted four World Cups and one Champions Trophy before this but hardly ever was a spinner the highest wicket-taker. That happened this time because the pitches were as English as a convent-educated Bengali boy. Thank heavens we had a couple of good spinners. Our pace trio, for example, could hardly make inroads into the most solid batting line-up of the tournament --- England’s.

The less said about our opponents the better. South Africa without Dale Steyn, Graeme Smith and Jacques Kallis are hardly better than South Africa A, but even then we conceded more than 300 against them; the West Indies are still not as good in the 50-over format as in the T20s; this Pakistan side had nothing Pakistani about them except for the green shirt; Sri Lanka are basically a two-man team now and those two failed against us.

That brings us to England, who think their top three can bat the way they did in the 1980s because they have Bevans and Kluseners down the order. Even the England bowling, with the exception of James Anderson, is overrated. Remember who was their best bowler in the final? Ravi Bopara. That despite overcast conditions. What did Stuart Broad, the next Botham, do? Or the lion-hearted Tim Bresnan? And let’s not waste words on their ability to play spin.

So here we are, the champion of champions in ODIs and comfortable winners against a rudderless Australian side in Tests, looking to visit South Africa, the No. 1 Test team and a completely different side in ODIs in their own backyard. The inconvenient hyphen called tri-series in the West Indies and the unnecessary comma called Zimbabwe tour won’t test us, hopefully.

Some of our much-vaunted weapons won’t cut ice in Africa. They won’t make dry pitches to help Ravindra Jadeja and Ravichandran Ashwin. How good our captain’s Mr Reliable (Ishant Sharma) bowls is going to be a deciding factor; the last tour Down Under doesn’t give much hope. Bhuvneshwar Kumar’s problem, going by our captain’s use of him, is he can swing the ball. So he will only be bowled when the ball is new. Form and potential be damned. Does Umesh Yadav know what is to be done with his fearsome speed? God knows.

Our new hope Dhawan is untested on bouncy pitches; Murali Vijay looked out of place on the previous tour. Cheteshwar Pujara, too, will have to do better than last time. How will the Little Master do? Nobody would like to guess; let’s hope Virat Kohli comes out in flying colours.

Dhoni took Rohit Sharma to Champions Trophy as a middle-order batsman and had so much faith in the abilities of Vijay that he didn’t even take a third opener. Just because Vijay couldn’t score in the warm-up ties, he lost all faith and made Rohit an opener, keeping Vijay on the bench for the entire tournament. Whether Rhiti Sports had a role in determining Dhoni’s faith before a foreign tour will not be asked now because in India, end justifies the means. Father of the Nation be damned, we live in the age of Modi.

But questions persist. Questions which have been shelved now for we are overwhelmed by a Champions Trophy victory, even after winning two World Cups.

Hail Dhoni! However, I can’t accept him as the best ever India skipper, let alone one of the best in the history of the game. I have cricketing reasons for that but will only offer a non-cricketing one here, which is enough, at least for me --- a true leader will never keep shut under the instructions of either the Board president or the country’s president.

Call me a cynic but remember, cynicism doesn’t harm anybody, euphoria does. Flip through any history book for instances.

Tuesday, April 24, 2012


এই জীবনে যে কটিদিন পাবো

এখন তো আকাশ ছোট হতে হতে
ফল্স সিলিং হযেছে ,
আর জানলা ছোট হতে হতে উইন্ডস সেভেন |
প্রেমিক হতে চেয়ে এতটা পেশাদার
আজকাল অনেকেই হয় |
তবে যে একবার তোমায় দেখেছে
তার পক্ষে সুবিন্যস্ত থাকা শক্ত |
সে বিপদ এড়াতে
তোমায় ওয়ালপেপার করে দেবে কেউ
আমি দেখতে পারবোনা |
রবীন্দ্রসংগীতের মতো আশ্রয় দিয়েছ
আর ভদকার মত মিষ্টি হ্যাংওভার
তেন্ডুলকর |  
                                                                         প্রতীক বন্দ্যোপাধ্যায়